প্রকাশিত: জুন ২০, ২০২৪
নিজস্ব প্রতিবেদক. বাগেরহাটে কোরবানির পশুর চামড়া ক্রয় করে বিপাকে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা।লবনের দাম বৃদ্ধি ও ঈদের পরে মোকাম থেকে ট্যানারী মালিকরা চামড়া ক্রয়ের জন্য যোগাযোগ না করায় লোকসানের শঙ্কায় রয়েছেন তারা। অনেকে সংরক্ষন ব্যয় বাঁচাতে চামড়া নদীতে ফেলে দিয়েছেন।
ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানাযায়, প্রতি বছরের ন্যায় এবারও কোরবানীর পশুর চামড়া সংগ্রহ করেছেন তারা।বিগত বছর গুলোর তুলনায় কম দামে চামড়া সংগ্রহ করলেও, ব্যয় বেড়েছে লবনে। এবার ৫০ কেজির প্রতি বস্তা লবনে ৭ থেকে ৮শ টাকা অতিরিক্ত দিয়ে ১৪-১৫শ টাকায় কিনতে হয়েছে লবন। আর প্রতিটি গরুর গড়ে ৪শ থেকে ৬শ টাকায় ক্রয় করা হয়েছে। এই চামড়া পরিবহন ও লবন দিয়ে প্রক্রিয়াজাতকরণ করতে আরও ৩শ টাকা ব্যয় হয়। সব মিলিয়ে ৯শ সাড়ে ৯শ টাকা ব্যয় হচ্ছে এই একটি চামড়ায়।
চামড়া প্রক্রিয়াজাতকরণ করার পরেও ট্যানারি মালিক ও বড় ব্যবসায়ীরা চামড়া ক্রয়ের জন্য এখনও যোগাযোগ করেনি। সময় বৃদ্ধি পেলে প্রক্রিয়াজাতকরণ ব্যয়ও বৃদ্ধি পাবে। প্রক্রিয়াজাতকরণ ব্যয় বৃদ্ধি পাওয়ায় অনেক ব্যবসায়ী চামড়া ফেলেও দিয়েছেন। যার ফলে গেল বছরের মত এবারও লোকসানের শঙ্কায় রয়েছেন প্রান্তিক এই ব্যবসায়ীরা।
ব্যবসায়ী লোকমান শিকদার বলেন, অনেক কষ্ট করে এলাকা এলাকা ঘুরে চামড়া সংগ্রহ করি আমরা। এর পরে লবন দিয়ে প্রক্রিয়াজাতকরণ করি। পুরো প্রক্রিয়াটি খুবই জটিল। এরপরেও আমরা দাম পাই না। সবই বড় ব্যবসায়ী ও ট্যানারি মালিকদের পকেটে চলে যায়। এভাবে চলতে থাকবে ব্যবসা করা কঠিন হবে।
মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ী দিপু রবি দাস বলেন, একটি চামড়া এলাকা থেকে কিনে, লবন দেওয়া সংরক্ষন করাসহ আমাদের প্রায় ৯‘শ এক হাজার টাকা পরে যায়। কিন্তু এই চামড়া যখন নাটোরসহ বিভিন্ন ট্যানারিতে নিয়ে যাই, তখন দাম কম বলে। আবার কিছু চামড়া বাদ দেয়। নানা অজুহাত দেখায়। আবার কুরবানি আসলেই লবনের দাম বেড়ে যায়। এসব কারণে কয়েক বছর ধরে আমাদের লোকসান হচ্ছে। এবার কি হবে জানি না।
এদিকে মাদরাসা শিক্ষকরা বলছেন, এতিমদের জন্য সংগ্রহ করা চামড়ারও তেমন দাম পায়নি। কিছু চামড়া ফেলে দিয়েছেন, আর নামমাত্র ২শ থেকে ৩শ টাকা মূল্যে বিক্রি করেছেন। এতিম শিক্ষার্থীদের পড়াশুনা স্বাভাবিক রাখতে সঠিক মূল্যে চামড়া বিক্রির নিশ্বয়তা চান শিক্ষকরা।
বাগেরহাট শহরের মাদরাসাই-ই-তালিমুল কুরআনের মুহতামিম মাওলানা মুহাম্মাদ উল্লাহ আরেফী বলেন, মাদরাসায় পড়াশুনা করা এতিম শিশুদের খাবার ও পোশাকের একটা বড় অংশ আসে কুরবানির পশুর চামড়া থেকে। কিন্তু কয়েক বছর ধরে চামড়ার দাম নাই বললেই চলে। এবার চামড়া বিক্রি করেছি, মাত্র ২শ টাকা করে। শুনলাম লবনের দাম বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে ব্যবসায়ীরা চামড়া কিনছেন না।
বাগেরহাটের সব থেকে বড় চামড়া ব্যবসায়ী আব্দুস সালাম খান বলেন, বাগেরহাটে লক্ষাধিক পশু জবাই হয়েছে। কয়েক বছর আগেও ১৫শ টাকা থেকে ৪হাজার টাকা দরে গরুর চামড়া কিনেছি। এবার ৪শ থেকে ৬শ টাকায় চামড়া কিনেছে। তারপরও লোকসান হবে, কারণ লবনের দাম বেড়েছে কুরবানির আগের দিন। আজ চারদিন হয়ে গেল এখন পর্যন্ত মোকাম থেকে চামড়ার জন্য কেউ যোগাযোগ করেণি। লবন সিন্ডিকেটের কারণে চামড়া সংরক্ষন করা কঠিন। আবার নাটোরসহ বড় মোকামে নিয়ে গেলে, সিন্ডিকেট করে কম দামে প্রক্রিয়াজাতকরণ চামড়া কেনে। যার ফলে প্রতিবছর চামড়ার ব্যবসায় লোকসান হচ্ছে। চামড়া শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে সরকারের পৃষ্টপোষকতা দাবি করেন এই ব্যবসায়ী।