৫ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, বৃহস্পতিবার,সকাল ৮:২৯

মোংলা বন্দরের ৭৪ তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উদযাপন

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১, ২০২৪

  • শেয়ার করুন

নিজস্ব প্রতিবেদক. বাগেরহাটে বর্নাঢ্য আয়োজনে মোংলা বন্দরের ৭৪ তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উদযাপিত হয়েছে। দিনটি উপলক্ষে রবিবার (০১ ডিসেম্বর) সকালে বন্দর কর্তৃপক্ষের পৌনে ১০টায় মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের সদর দপ্তরের সামনে থেকে বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল শাহীন রহমানের নেতৃত্বে শোভাযাত্রা বের করা হয়৷বন্দর সড়ক ঘুরে শোভাযাত্রাটি জেটির প্রধান ফটকে এসে শেষ হয়।সেখানে বেলুন উড়িয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কার্যক্রম উদ্বোধন করেন বন্দর চেয়ারম্যান।

পরে বন্দর জেটির স্টাফিং এ্যান্ড আনস্টাফিং শেডে আলোচনা সভা ও সেরা বন্দর ব্যবহারকারীদের সংবর্ধনা দেওয়া হয়। এসব অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেণ, মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল শাহীন রহমান। এসময়, এসময়, বন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য (হারবার ও মেরিন)ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ কিবরিয়া হক, সদস্য (অর্থ) (যুগ্মসচিব), কাজী আবেদ হোসেন, সদস্য (প্রকৌশল ও উন্নয়ন) (যুগ্মসচিব) ড. এ. কে. এম. আনিসুর রহমান, পরিচালক (বোর্ড) যুগ্নসচিব কালাচাঁদ সিংহ, পরিচালক (প্রশাসন) উপসচিব মোঃ নুরুজ্জামান, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির গবেষনা বিষয়ক সম্পাদক কৃষিবিদ শামীমুর রহমান, বাগেরহাটের পুলিশ সুপার মোঃ তৌহিদুল আরিফ বন্দরের কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি দপ্তরের প্রতিনিধিগণ উপস্থিত ছিলেন।

এদিন বন্দরে সেরা কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ টগী শিপিং এ্যান্ড লজিস্টিক, বসুন্ধরা মাল্টি ট্রেডিংসহ ২৯টি প্রতিষ্ঠানকে সম্মাননা প্রদান করা হয়। বসুন্ধরা গ্রুপের পক্ষে সম্মাননা গ্রহন করেন টগি শিপিং অ্যান্ড লজিস্টিকস লিমিটেড-এর হেড অফ ডিপার্টমেন্ট ক্যাপ্টেন মো. মাহবুবুল আলম। এছাড়া সেরা কাজের স্বীকৃতি স্বরুপ বন্দরের সকল বিভাগ হতে ৩২ জন কর্মকরতা কর্মচারীকে সম্মাননা প্রদান করা হয়।

এছাড়া দিনটি উপলক্ষে শনিবার দিবাগত রাত ১২:০১ মিনিটে বন্দরে অবস্থানরত দেশী, বিদেশী সকল জাহাজে এক মিনিট বিরতিহীন হুইসেল বাজানো হয়।

১৯৫০ সালের ১ ডিসেম্বর খুলনার চালনা নামক স্থানে চালনা পোর্ট নামে এ বন্দর স্থাপন করা হয়।প্রতিষ্ঠার মাত্র তিন বছর পরে ভৌগোলিক কারণে ১৯৫৩ সালে কার্যক্রম স্থানান্তরিত হয় বাগেরহাটের মোংলায়। ১৯৮৭ সালের পোর্ট অব চালনা অথরিটি এ্যাক্ট অনুসারে প্রথমে চালনা বন্দর কর্তৃপক্ষ এবং পরবর্তীতে মোংলা পোর্ট অথরিটি নামে প্রতিষ্ঠা লাভ করে।

মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল শাহীন রহমান বলেন, মোংলা বন্দরের আধুনিকায়ন ও সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিদেশি জাহাজ চলাচলের সুবিধার জন্য বন্দর চ্যানেল ৬৯টি নেভিগেশন বয়া স্থাপন করা হয়েছে। জেটি, মুরিং বয়া এবং এ্যাংকোরেজ-এ একই সাথে ৪৭ টি জাহাজ নোঙ্গরের সুবিধা রয়েছে এ বন্দরে। এছাড়াও আমদানি-রপ্তানিকারকদের জন্য ট্রানজিট শেড, ওয়্যার হাউজ, কন্টেইনার ইয়ার্ড, হিমায়িত খাদ্য সংরক্ষণের জন্য ১৬১ টি রিফার প্লাগপয়েন্ট, কার পার্কিং ইয়ার্ড, ১৩৬ টি আধুনিক হ্যান্ডলিং যন্ত্রপাতি, টাগবোটসহ ৩২ টি সহায়ক জলযানের সুবিধা বিদ্যমান।

তিনি আরও বলেন, মোংলা বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য আরও ৪টি প্রকল্প চলমান রয়েছে। পশুর চ্যানেলের ইনার বারে ড্রেজিং প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে মোংলা বন্দরে জেটি পর্যন্ত  ১০ মিটার ড্রাফটের জাহাজ হ্যান্ডলিং এর সুবিধা সৃষ্টি হবে। মোংলা বন্দরের আধুনিক বর্জ্য ও নিসৃত তেল অপসারণ ব্যবস্থাপনা, সহায়ক জলযান সংগ্রহ, নিরাপদ চ্যানেল বিনির্মাণ, সমুদ্রগামী জাহাজ সুষ্ঠুভাবে হ্যান্ডলিং এবং দূর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় জরুরি উদ্ধার কার্য পরিচালনাসহ নানা কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে। এসব প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে মোংলা বন্দরের সক্ষমতা ও ব্যবস্তা বৃদ্ধি পাবে বলে জানান তিনি।

মোংলা বন্দর সূত্রে জানাযায়, মোংলা বন্দরের উন্নয়ন ও ব্যবহার বৃদ্ধির লক্ষ্যে গৃহীত পদক্ষেপের ফলে ২০০৮-২০০৯ অর্থবছর থেকে মোংলা বন্দরের কার্যক্ষমতা ক্রমবর্ধমান হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। যার ফলে ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের তুলনায় ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের প্রবৃদ্ধি যথাক্রমে বিদেশী বাণিজ্যিক জাহাজ আগমনের ক্ষেত্রে ২.৩০%, কার্গো ৯.৭২%, কন্টেইনার ১৬.৭৮% এবং গাড়ির ক্ষেত্রে ১৩% প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। বর্তমান অর্থ বছরের প্রথম ০৪ (চার) মাসে ২৯ লক্ষ মে. টন পন্য আমদানি রপ্তানি হয়েছে। এছাড়াও আধুনিক যন্ত্রপাতি সংগ্রহের ফলে প্রথমবারের মতো প্রতি ঘন্টায় ২৪ টিরও বেশি কন্টেইনার হ্যান্ডলিং করা সম্ভব হচ্ছে এবং জেটির সম্মুখে নিয়মিত ড্রেজিং এর ফলে নাব্যতা বিরাজমান থাকার কারণে ০৫ টি জেটিতে একই সাথে ০৫ টি জাহাজ হ্যান্ডলিং করা সম্ভব হচ্ছে। বাংলাদেশের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত, নেপাল আর ভুটানের ট্রানজিট পণ্য মোংলা বন্দরের মাধ্যমে রপ্তানির সুসম্ভাবনা সৃষ্টি হবে। মোংলা বন্দর ব্যবহার করে স্থল, নৌ আর রেলপথের মাধ্যমে রাজশাহী, রংপুর ও বরিশাল বিভাগের পণ্য পরিবহনকে দ্রুততর ও সহজ করবে।

দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের প্রাণপ্রবাহ এ বন্দরটি কর্মসংস্থান সৃষ্টির পাশাপাশি বর্তমানে খাদ্যশস্য, সিমেন্ট ক্লিংকার, সার, মোটর গাড়ী, মেশিনারিজ, চাল, গম, কয়লা, তেল, পাথর, ভুট্টা, তেলবীজ, এলপিজি গ্যাস আমদানি এবং সাদামাছ, চিংড়ি, পাট ও পাটজাত দ্রব্য, হিমায়িত খাদ্য, কাকড়া, ক্লে টাইলস, রেশমী কাপড় ও জেনারেল কার্গো রপ্তানির মাধ্যমে দেশের চলমান অর্থনীতিতে বিশেষ ভূমিকা রেখে আসছে বলে দাবি বন্দর কর্তৃপক্ষের।

 

  • শেয়ার করুন