প্রকাশিত: জুন ১, ২০২৫
নিজস্ব প্রতিবেদক. মাছ ও বন্যপ্রাণীর বংশবৃদ্ধি, বিচরণ এবং প্রজনন কার্যক্রমের সুরক্ষায় সুন্দরবনে টানা তিন মাসের জন্য দর্শনার্থী ও বনজীবিদের প্রবেশ নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে বন বিভাগ। রোববার (১ জুন) থেকে শুরু হয়ে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত বন্ধ থাকবে এই বনের দুয়ার। দাবি বন বিভাগের এতে সতেজতা বাড়বে সুন্দরবনের প্রাণ প্রকৃতিতে।
বন বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবনে রয়েল বেঙ্গল টাইগার, মায়াবি হরিণ, বানর, কুমির, গুইশাপসহ ২৮৯ প্রজাতির স্থলজ প্রাণী, ৪২ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ৩৫ প্রজাতির সরীসৃপ, ৮ প্রজাতির উভচর এবং বিভিন্ন প্রকার মাছসহ ২১৯ প্রজাতির জলজ প্রাণী, ২৯০ প্রজাতির পাখি ও ৩৪৪ প্রজাতির উদ্ভিদ রয়েছে। এর মধ্যে মধ্যে দুই প্রজাতির উভচর, ১৪ প্রজাতির সরীসৃপ, ২৫ প্রজাতির পাখি এবং পাঁচ প্রজাতির স্তন্যপায়ী বর্তমানে হুমকির মুখে রয়েছে। সুন্দরবনের অভ্যন্তরে দর্শনার্থীদের ভীড়, বনজীবিদের কর্মযজ্ঞ ও চোরা শিকারীদের দাপটে আরও বেশি সংকটে পড়ে এসব প্রাণ-প্রকৃতি।এসব প্রাণ প্রকৃতি রক্ষায় প্রতি বছরের ন্যায় এবারও প্রজনন মৌসুমে সুন্দরবনের অভ্যন্তরে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে বন বিভাগ। নিষেধাজ্ঞার ফলে বনের অভ্যন্তরে নদী-খালের মাছসহ সকল প্রাণিদের প্রাণিদের অবাধ বিচরণ ও প্রজনন বৃদ্ধির জন্য রোববার (০১ জুন) থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত সুন্দরবনে বনজীবি ও দর্শনার্থীদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।
একসাথে ৯০ দিনের এই নিষেধাজ্ঞার ফলে সুন্দরবনে মাছসহ সকল প্রাণির সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে। তবে এই নিষেধাজ্ঞা যেযোন শুধু কাগজে কলমে না হয় সেজন্য বন বিভাগকে নজরদারি বাড়ানোর দাবি স্থানীয়দের।
শরণখোলা উপজেলার বন সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দা নাজমুল ইসলাম বলেন, সুন্দরবনে এই সময় বৈধভাবে কেউ প্রবেশ করবে না। তবে অবৈধভাবে অপরাধিদের প্রবেশ ঠেকানোই এখন চ্যালেঞ্জ। যদি অপরাধিদের প্রবেশাধিকার বন্ধ করা যায়, তাহলে বন বিভাগের উদ্দেশ্য সফল হবে। আমরা যারা বনজীবি রয়েছি তারাও লাভবান হব।এদিকে পরিবেশকর্মীরা বলছেন, নিষেধাজ্ঞার সময় বন বিভাগের যোগসাজগে অসাধু জেলেরা বনের মধ্যে প্রবেশ করে মাছ আহরণ করে।
নিষেধাজ্ঞার সময় যাতে কেউ বনে প্রবেশ না করতে পারে এজন্য বন বিভাগের পাশাপাশি অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সতর্ক থাকার আহবান জানান বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন-বাপা‘র সদস্য মোঃ নূর আলম শেখ।তিনি আরও বলেন, সুন্দরবন আমাদের মায়ের মত। তবে সুন্দরবন সংশ্লিষ্ট যেসব অপরাধ হয়ে থাকে এগুলো মানুষই করে। আর সুন্দরবন রক্ষার দায়িত্বও কোন না কোন মানুষের। রক্ষার দায়িত্বে যারা আছেন, তাদেরকে আরও বেশি আন্তরিক হতে হবে বন রক্ষায়।
সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও)মো. রেজাউল করীম চৌধুরী বলেন, এই সময় স্বাভাবিকের তুলনায় টহল বৃদ্ধি করা হবে। নিষেধাজ্ঞা সফলভাবে বাস্তবায়ন করতে পারলে সুন্দরবনে প্রাণিকূল ও মৎস্য ভান্ডার সম্মৃদ্ধ হবে বলে দাবি এই বন কর্মকর্তা।তিনি আরও বলেণ, সুন্দরবনের নড়-নদীতে থাকা বেশিরভাগ মাছ ও জ্বলজ প্রাণির প্রজনন মৌসুম জুন-জুলাই মাস। এই সময় আমরা যদি বনকে কোলাহলমুক্ত রাখতে পারি, তাহলে বন্য প্রাণিদের প্রজনন বৃদ্ধি পাবে। এর ফলে সুন্দরবন আরও বেশি ভাল থাকবে।ইন্টিগ্রেটেড রিসোর্সেস ম্যানেজমেন্ট প্ল্যানের (আইআরএমপি) সুপারিশ অনুযায়ী ২০১৯ সাল থেকে ১ জুলাই থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত সুন্দরবনে প্রবেশ বন্ধ থাকত। পরে ২০২২ সালে মৎস্য বিভাগের সাথে সমন্বয় করে ০১ জুন থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। এই সময়ে কাজ হারানো সাগরে মাছধরা জেলেদের মৎস্য অধিদপ্তর থেকে সহায়তা দেওয়া হলেও সুন্দরবনের উপর নির্ভরশীল জেলেরা পায়না কোন সহায়তা।