নিজস্ব প্রতিবেদক. আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে পিরোজপুর-২ (ভাণ্ডারিয়া-কাউখালী-স্বরূপকাঠি) আসনে সম্ভাব্য প্রার্থীদের তৎপরতা শুরু হয়েছে। নানা সভা- সমাবেশ, গনসংযোগ, দোয়া চেয়ে পোস্টার,ব্যানার ও ফেস্টুন প্রচারণা চোখে পড়ছে। সেই সাথে প্রয়াত নেতাদের কবর জিয়ারতসহ এলাকায় সফর করে নিজের অবস্থান জানান দিচ্ছেন অনেকেই। অনেকেই দলের অবহেলিত নেতা-কর্মীদের খোঁজ খবরও নিচ্ছেন। জানাগেছে, পিরোজপুর জেলার নতুন আসন বিন্যাসের পর থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশীরা তৎপর হয়ে ওঠেন। প্রার্থী হতে এলাকায় জানান দিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন তারা। নির্বাচনী তৎপরতায় বিএনপি নেতৃবৃন্দও কর্মব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। উৎসবে শুভেচ্ছা বিনিয়ম ছাড়াও এলাকায় সফর বাড়িয়েছেন সম্ভাব্য প্রার্থী ও নেতা কর্মীরা। অপর দিকে স্বেচ্ছা নির্বাসনে থাকা জামায়াতে ইসলামীও তাদের কর্ম তৎপরতা শুরু করেছেন। পিরোজপুর জেলার স্বরূপকাঠি (নেছারবাদ) উপজেলাটির স্থায়ী নিবাস ঠিক হয়নি। ওই উপজেলাটি একসময় ছিল বরিশালের সাথে পিরোজপুর অর্থাৎ স্বরূপকাঠি ও বানারীপাড়া আসন হিসেবে। আবার ২০০৮ সালের নির্বাচনে দুই জেলার মিশ্রন থেকে মুক্ত করে স্বরূপকাঠিকে পিরোজপুর জেলার দুই নম্বর আসনের সাথে সংযুক্ত করেন নির্বাচন কমিশন। ২০১৪ সালের নির্বাচনে তা আবার পরিবর্তন হয়ে পিরোজপুর-১ আসনের সাথে সংযুক্ত হয়। ওইসময় প্রবল আপত্তির পরেও জেলার ৯ লাখ ৬৯ হাজার ১৩৮ ভোটারের মধ্যে অর্ধেক অর্থাৎ ৪ লাখ ৮৪ হাজার ৫১১ জন ভোটার নিয়ে পিরোজপুর-১ আসন। বাকী অর্ধেক ভোটার নিয়ে পিরোজপুর-২ ও পিরোজপুর-৩ আসন গঠিত হয়। এলাকাবাসীর দাবীর প্রেক্ষিতে ওই আসন পুনঃবিন্যাস করে চলতি ২০২৩ সালে নির্বাচন কমিশন গেজেট প্রকাশ করেছেন। এ আসন বিন্যাসে ভোটার সংখ্যার বৈসম্য কিছুটা কমেছে। এবারে স্বরূপকাঠি পিরোজপুর-২ আসনে। ওই আসনে স্বরূপকাঠি(নেছারাবাদ), কাউখালী ও ভান্ডারিয়া মোট ভোট ৩ লাখ ৮২ হাজার ১৯৫ জন। এ বিন্যাসে সন্তুষ্ট হতে না পেরে পিরোজপুর-২ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য সাবেক মন্ত্রী জেপি চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর পক্ষ থেকে হাই কোর্টে রিট পিটিশন দায়ের করা হয়। যার শুনানী এখনো চলমান। নতুন করে আসন বিন্যাসের পর পিরোজপুর -২ আসনের আওয়ামীলীগ, বিএনপি, জেপি ও জাতীয় পার্টির মনোনয়ন প্রত্যাশীরা মাঠে নেমেছেন। এ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য সাবেক মন্ত্রী জেপি চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু ভাণ্ডারিয়া ও কাউখালীতে তার কর্মকান্ড অব্যহত রেখেছেন। এ আসনে ৯ম সংসদের সংসদ সদস্য, বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের জাতীয় পরিষদের সদস্য অধ্যক্ষ মো. শাহ আলম এলাকায় শুভেচ্ছা ব্যানার দিয়েছেন। তিনি বলেন, আমি বঙ্গবন্ধুর গড়া সংগঠন আওয়ামীলীগের রাজনীতি করি। সবসময়ই নির্বাচন করি দলের পক্ষে। দল যাকে মনোনয়ন দিবে তার পক্ষে বিগত দিনেও কাজ করেছি ভবিষ্যতেও করব। আমাদের অভিবাবক দলের প্রধান যে সিদ্ধান্ত দিবেন তা মেনে নিয়ে স্থানীয় জনমানুষের কল্যাণে কাজ করে আসছি। জানাগেছে, পিরোজপুর জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন মহারাজ গনসংযোগ করছেন। তিনি এলাকায় নানা মানবিক উন্নয়নে সহায়তাসহ এলাকায় গণসংযোগ করে চলেছেন। তিনি এবার এ আসনে দলীয় মনোনয়ন চাইবেন এটা পরিষ্কার। এ বিষয়ে তিনি বলেন,দল যাকেই নৌকা মনোনয়ন দিবেন তার পক্ষেই আমি কাজ করব ইনশাল্লাহ। বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক সাধারন সম্পাদক ইসাহাক আলী খান পান্না এবার মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে এলকায় নানা কাজে যুক্ত থেকে জনমানুষের মাঝে নিজেকে তুলে ধরছেন। তিনি বলেন, আওয়ামীলীগের রাজনীতি করি দলের প্রতি পূর্ন আস্থা রেখেই পথ চলি। আমার বাড়ী কাউখালী হলেও আমি স্বরূপকাঠি পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে লেখা পড়ার সুবাদে অনেকেই জানেন । যে দিন থেকে রাজনীতি শুরু করেছি সেদিন থেকেই বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে লালন করি, মনে প্রানে ধারন করি। এলাকাবাসীর পাশে থাকার চেষ্টা করি। স্বেচ্ছা সেবক লীগের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সম্পাদক সাজ্জাদ সাকিব বাদশা, আসন বিন্যাসের পর থেকে এলাকায় অবস্থান করছেন। প্রতিদিনই ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছা সেবক লীগের বিপুল সংখ্যক নেতা কর্মী নিয়ে এলাকায় গনসংযোগ করছেন। উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি সৈয়দ সহিদুল আহসান শুভেচ্ছা জানিয়ে পোষ্টার ব্যানার দিয়েছেন। কেন্দ্রীয় কৃষক লীগ নেতা আজম খান শুভেচ্ছা জানিয়ে ব্যানার দিয়েছেন। এছাড়াও স্বরূপকাঠি বানারীপাড়া আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মনিরুল ইসলাম মনি স্বরূপকাঠির বিভিন্ন এলাকা সফর করে নেতাকর্মী সমর্থকদের সাথে দেখা স্বাক্ষাত করেছেন। বাংলাদেশ আওয়ামী সমবায় লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ও পিরোজপুর জেলা আওয়ামীলীগের সদস্য আমিনুর রহমান সগির শুভেচ্ছা জানিয়ে ব্যানার দিয়েছেন। এছাড়া কাউখালী উপজেলার কৃতি সন্তান, খুলনা সদর থানা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক যুব নেতা এবং খুলনাস্থ পিরোজপুর জেলা কল্যাণ সমিতির সভাপতি আলহাজ্ব খান মোঃ কবির হোসেন ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়ে পোষ্টার দিয়েছেন। এলাকার মানুষের মাঝে সরকারের উন্নয়ণ কর্মকান্ডের লিফলেট বিতরণ করেন এবং আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকার পক্ষে ভোট প্রার্থনা করেন। অপর দিকে বিএনপির স্বরূপকাঠি উপজেলার আহ্বায়ক সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মো. ওয়াহিদুজ্জামান অহিদ, সাবেক প্রতিমন্ত্রী নুরুল ইসলাম মঞ্জুর পূত্র আহম্মদ সোহেল মঞ্জু, কাউখালী উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপির সভাপতি আহসান কবীরের নাম আলোচনায় এসেছে। জাতীয় পার্টি পক্ষ থেকে নিজকে জানান দিয়ে ব্যানার দিয়েছেন জাফর ইকবাল নিরব। জামায়াতের কোন প্রার্থীর নাম পাওয়া যায়নি। দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর কোন সন্তান প্রার্থী হতে পারেন বলে নাম প্রকাশ না করে এক জামায়াত নেতা জানিয়েছেন।