২২শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার,রাত ১০:৪৯

বাগেরহাটে যৌথ বাহিনীর অভিযানে তিন দলিল লেখক আটক, ৩ লক্ষাধিক টাকা উদ্ধার

প্রকাশিত: নভেম্বর ২২, ২০২৪

  • শেয়ার করুন

নিজস্ব প্রতিবেদক. বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলা সাবরেজিষ্ট্র অফিসের দলিল লেখক সমিতিতে যৌথবাহিনী অভিযান চালিয়ে নগদ ৩ লাখ ৫৯ হাজার টাকা উদ্ধার করেছেন। এসময় জমির মালিক ও ক্রেতাদের কাছ থেকে অবৈধভাবে  অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে তিন দলিল লেখককে আটক করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) রাতে উপজেলা পরিষদ অভ্যান্তরে যৌথবাহিনী এই অভিযান পরিচালনা  করেন।

আটককৃতরা হলেন, দলিল লেখক সুব্রত অধিকারী (৪২), সদর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি ও দলিল লেখক সমিতির সভাপতি খান মনিরুজ্জামান (৫১) ও চিতলমারী উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারন সম্পাদক ও দলিল লেখক শেখ শামিম আনোয়ার (৫১)।

সুব্রত অধিকারী বাগেরহাট সদরের খালিশপুর গ্রামের কালিপদ অধিকারীর ছেলে, খান মনিরুজ্জামান চিতলমারী উপজেলার চিতলমারী গ্রামের মৃত আব্দুল মজিদ খানের ছেলে ও শেখ শামিম আনোয়ার শিবপুর বেপারীপাড়া গ্রামের মৃত শেখ মোস্তফা আনোয়ারের ছেলে।

এঘটনায় শুক্রবার (২২ নভেম্বর) শিবপুর বেপারীপাড়া গ্রামের মোঃ বাবুল হোসেনের ছেলে এস এম নান্টু হাসান বাদী হয়ে চিতলমারী  থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় অজ্ঞাত ৫-৬ জনকে আসামী করা হয়েছে। পুলিশ গ্রেফতারকৃতদের আদালতে প্রেরণ করেছেন।

মামলার বিবরণে জানা গেছে, বাদী এস এম নান্টু হাসান পেশায় একজন ব্যবসায়ী। গ্রেফতারকৃত ৩ জন আসামীসহ অজ্ঞাত পলাতক আসামীরা চিতলমারী উপজেলা সাবরেজিষ্ট্রার অফিসে দলিল লেখক সমিতির কথিত ব্যানারে দীর্ঘদিন যাবত এলাকার সাধারণ ও নীরিহ মানুষের নিকট হতে দলিল রেজিষ্ট্রি বাবদ সরকার নির্ধারিত ফি ছাড়াও প্রতারণামূলকভাবে অতিরিক্ত টাকা আত্মসাৎ করেছে। তিনি সমাজের একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে বিষয়টি স্থানীয় যৌথবাহিনীকে মৌখিক ভাবে অবহিত করেন। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় যৌথবাহিনী উপজেলা পরিষদের মধ্যে সাবরেজিষ্ট্রার অফিসে অভিযান চালান। এ সময় দলিল লেখক সমিতির সভাপতি ও মামলার ২নং আসামীর চেম্বারের টেবিলের ডানপাশের ড্রয়ারের ভিতর থেকে বর্নিত সকল আসামীসহ ৫-৬ জন আসামী টাকা ভাগবাটোয়ারা করার সময় নগদ ৩ লাখ ৫৯ হাজার টাকাসহ ৩ জনকে আটক করেন।

নাম না প্রকাশ করার শর্তে একাধিক ভূক্তভোগী জানান, চিতলমারী উপজেলা সাবরেজিষ্ট্রার অফিসকে ঘিরে ৫৫-৬০ জন দলিল লেখক রয়েছেন। এরা সমিতির ব্যানারে দাতা ও গ্রহীতাকে জিম্মি করে প্রতিটি দলিলে শতকরা ২ টাকা করে টাকা আদায় করেন। যা সম্পুর্ন বেআইনী।

৫ আগস্টের আগে এই সিন্ডিকেটের সভাপতি সম্পাদক ছিলেন আওয়ামী লীগ নেতা দেলোয়ার হোসেন ও যুবলীগের রবিউল ইসলাম খান এবং ৫ আগস্টের পর সভাপতি সম্পাদক হয়েছেন স্থানীয় বিএনপির দুই নেতা। যা সরকারের বিভিন্ন সংস্থা ও দলীয় নেতারা তদন্ত করলে থলের বিড়াল বেরিয়ে আসবে। তবে এতদিনের পুরানো সিন্ডিকেটে অভিযান চালানোতে উপজেলার সর্বস্তরের মানুষ যৌথবাহিনীকে সাধুবাদ জানিয়েছেন।

ভূক্তভোগীদের অভিযোগ,সিন্ডিকেটের নামে নানা অনিয়ম, দূর্নীতি ও গরীবের কষ্টার্জিত টাকা হাতিয়ে নেওয়ার নানা কৌশল। ওদের শক্তিশালী বাহিনীর হাতে গোটা উপজেলাবাসি জিম্মি। ভয়ে কেউ টু শব্দ করে না। তাই কয়েক যুগ ধরে চলে আসছে এ সিন্ডিকেটের কার্যক্রম।

চিতলমারী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এস এম শাহাদাৎ হোসেন বলেন, ‘যৌথবাহিনী অভিযান চালিয়ে টাকাসহ ৩ জন আসামীকে ঘিরে রাখে। আমাদের খবর দিলে আমরা গিয়ে টাকাসহ আসামীদের থানায় নিয়ে আসি। এ ঘটনায় থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। আসামীদের বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করেছি।’

এব্যাপারে জানতে চিতলমারী উপজেলা সাবরেজিষ্ট্রার সমীর কর্মকারকে বারবার ফোন দিলেও তিনি তা রিসিভ করেননি।

তবে জেলা সারেজিষ্টার মো. রুহুল কুদ্দুস মঠোফোনে বলেন, ‘বিষয়টি আমি শুনেছি। অফিস বন্ধ তাই রবিবারের আগে বিস্তারিত কিছু বলতে পারবনা। দলিল লেখকরা অনিয়ম-দূর্নীতি করলে মানুষ অভিযোগ দিলে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিব।’

  • শেয়ার করুন