প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২৪, ২০২৪
নিজস্ব প্রতিবেদক . ‘ওলো সই, ওলো সই, আমার ইচ্ছে করে তোদের মতন মনের কথা কই’ রবীন্দ্রনাথের গানের কথার প্রতিপাদ্য নিয়ে বাগেরহাটে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দিপনার মধ্যে দিয়ে শতবর্ষী বাগেরহাট সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের মিলন মেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) সকালে পৌষের শীত মাড়িয়ে ভোরেই সহপাঠিদের সাথে দেখা করতে দল বেঁধে বিদ্যালয়ে আসেন সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা। শুরু হয় নবীন-প্রবীনদের মিলনমেলা। দীর্ঘ বছর পর প্রিয় বিদ্যালয়ে পা-রেখে তাদের মত সবাই ব্যাস্ত প্রিয় বন্ধু-সহপাঠীদের খোঁজে। দীর্ঘদিনের পরিচিতদের সঙ্গ পেয়ে কেউ মেতেছেন আড্ডায়, কেউ গানে, কেউ বা স্মৃতি কথায়।
দুই দিনব্যাপী এই আয়োজন বুধবার (২৫ ডিসেম্বর) রাতে বাগেরহাট জেলা স্টেডিয়ামে আয়োজিত সাংষ্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।
উৎসবে ১৯৬২ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন বর্ষে বিদ্যালয় থেকে পাশ করা দেড় সহস্রাধিক শিক্ষার্থী ছাড়াও বর্তমান শিক্ষার্থীরা অংশে নিচ্ছে।এদিন, বেলা ১১টায় বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে জাতীয় সঙ্গীতের সঙ্গে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় আনুষ্ঠানিকতা। পরে প্রাক্তন ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা রং বে রং এর ফেস্টুন প্লাকার্ডে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের করে। শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে শোভাযাত্রাটি বাগেরহাট জেলা স্টেডিয়ামে গিয়ে শেষ হয়।পরে সেখানে স্মৃতিচারণ অনুষ্ঠানে কথা বলেন বিদ্যালয়ের বিভিন্ন ব্যাচের শিক্ষার্থীরা।প্রবীণদের সঙ্গে পরিচয়ের পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন প্রান্তে নানা গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালনকারী বিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পরিচিত হতে পেরে উচ্ছ্বসিত নবীনরাও ।সন্ধ্যায় বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে বর্তমান ও প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে সাংষ্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।
ষাটের দশকের প্রাক্তন শিক্ষার্থী জোসনা দেবনাথ বলেন, ক্লাস থ্রিতে এই স্কুলে ভর্তি হই। পাকিস্তান আমলে আমি এই স্কুল থেকে মাধ্যমিক পাশ করি। স্কুল মানে আবেগ, ভালবাসা। আজ এই স্কুলে আসলাম, আমার সময়ে আমার কোন সহপাঠিকে এখানে পাচ্ছিনা। তাতে আমার দু:খ নেই। এখনকার ছোটদের কাছে পেয়ে দারুণ উপভোগ করছি। সবার মাঝে যেন আমি আমার শৈশবকে ফিরে পাচ্ছি।পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানের আহ্বায়ক মাসুমা রুনা বলেন, গত এক বছর ধরে এই পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানের আয়োজনের চেষ্টা করি। আজ সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। ১৯৬২ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত এই স্কুলে পড়া দেড় হাজার শিক্ষার্থী পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে যোগ দিতে অগ্রীম নিববন্ধন করেন। পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে যোগ দিতে পেরে তারা সবাই দারুণ আনন্দিত।
নানা অনুষ্ঠানমালায় সাজানো হয়েছে এই পুনর্মিলনীর দুদিনের অনুষ্ঠান। সবাই যেভাবে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে তাতে আমরা সত্যিই মুগ্ধ। এই দুদিন সবাই দারুণ আনন্দে মেতে থাকবেন।দুদিনব্যাপী অনুষ্ঠানে, স্মৃতিচারণ, ক্রীড়া প্রতিযোগিতা, আড্ডা, শিক্ষার্থীদের পরিবেশনায় সংগীতা অনুষ্ঠান, রং উৎসব, ৭১ ও ২৪ এর শহীদদের স্মরণ, মোমবাতি প্রজ্জ্বলন ও দেশের খ্যাতনামা শিল্পীদের পরিবেশনায় সাংষ্কৃতিক অনুষ্ঠান রয়েছে।১৯১৮ সালে বাগেরহাট শহরের প্রাণ কেন্দ্রে গড়ে ওঠে সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের বয়স এখন ১০৭ বছর। প্রথমে প্রাথমিক বিদ্যালয় হিসেবে যাত্রা শুরু করা স্কুলটি ১৯৩৮ সাল। এর পর ১৯৬৮ সালে সরকারি করণের পর এর নামকরণ করা হয় বাগেরহাট সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়।