১১ই জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার,রাত ৪:২৪

মোংলা বন্দর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে সাড়ে ৪১ কোটি টাকা নীট মুনাফা অর্জন

প্রকাশিত: জুলাই ১০, ২০২৫

  • শেয়ার করুন
নিজস্ব প্রতিবেদক.  এক সময়ের মৃতপ্রায় দেশের দ্বিতীয় সমুদ্র বন্দর মোংলা এখন লাভজনকে পরিনত হয়েছে। প্রতিবছর রেকর্ড সংখ্যক জাহাজ আগমন বৃদ্ধি পেয়ে ধারাবাহিকভাবে দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে ব্যপক ভূমিকাও রাখছে এ বন্দর। এ অবস্থায় ২০২৪-২৫ অর্থ বছরে এই বন্দরের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে দুই দশমিক ৮৩ শতাংশ রাজস্ব আয়ও হয়েছে। জাহাজও এসেছে অর্থ বছরে ৩০টি বেশি। কিন্তু জাহাজ আগমনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৮০০টি। সতেরো দশমিক ২৫ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি কার্গো হ্যান্ডলিং হয়েছে।

মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল শাহীন রহমান জানান, বন্দর পরিচালনার অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে বন্দরের স্টেক হোল্ডার, শিপিং এজেন্টস, সি এন্ড এফ এজেন্ট ও ষ্টিভেডরসহ সব ধরনের বন্দর ব্যবসায়ীদের সুযোগ সুবিধা দেওয়ায় সফলতার এই অর্জন। এছাড়া অভ্যন্তরীণ ব্যবসা উন্নয়ন স্থায়ী কমিটি গঠন করার ফলে জাহাজ আগমন বৃদ্ধি পেয়েছে বলেও জানান তিনি।
বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান আরও বলেন, মোংলা বন্দরে জাহাজ জট নেই। কন্টেইনার খালাসের ক্ষেত্রে টার্ন এরাউন্ড টাইম এক দশমিক ৬৬ / ৪০ ঘণ্টা এবং এভারেজ অন্যান্য ক্ষেত্রে টার্ন এরাউন্ড টাইম তিন দশমিক ৩৭/ ৭৮ ঘণ্টা। গাড়ি আমদানিকারকদের জন্য বিশেষ সুবিধাদি বিদ্যমান রয়েছে। পর্যাপ্ত কন্টেইনার রাখার জন্য সাতটি টি কন্টেইনার ইয়ার্ড রয়েছে। টাগ বোর্ট, পাইলট বোর্ট, মুরিং বোর্ট, পাইলট ডেসপাস বোর্ট, সার্ভে বোর্ট, ড্রেজার ইউনিট ইত্যাদিসহ মবক এর বন্দরে ৩৮ টি সহায়ক জলযান রয়েছে। এছাড়া বন্দরের নিরাপওার ক্ষেত্রে আইএসপিএস কোড যথাযথ অনুসরণ করার পাশাপাশি বিদেশি জাহাজ আগমন ও নির্গমনের সময় নিরাপওা প্রদানের জন্য কোস্টগার্ডের নিয়মিত টহল বিদ্যমান ছাড়াও এ বন্দর থেকে নিরাপদে কম খরচে সড়ক ও নৌপথে সহজে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে মালামাল পরিবহনের সুবিধা রয়েছে।
তিনি বলেন, দীর্ঘ ১৪৪ কিলোমিটার বন্দর চ্যানেলে লাইটেড বয়া ও লাইট টাওয়ার স্হাপনের মাধ্যমে দিবারাত্রি নিরাপদ ও নির্বিঘ্নে জাহাজ চলাচলের ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত নেভিগেশনাল সুবিধা সৃষ্টি হয়েছে এবং বিদেশি বাণিজ্যিক জাহাজের জন্য ৪৯ টি বিভিন্ন পয়েন্টে বার্দিং সুবিধাও রয়েছে।
এদিকে ২০২৪- ২৫ অর্থ বছরের হিসেব তুলে ধরতে সাংবাদিকদের সামনে হাজির হন মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের প্রধান হিসাব রক্ষন কর্মকর্তা মোঃ সিদ্দিকুর রহমান।
বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) দুপুর ১২টায় বন্দর কর্তৃপক্ষের সভাকক্ষে সাংবাদিকদের কাছে বলেন, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে জাহাজ আগমনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৮০০টি। এ অর্থবছরে বন্দরে ৮৩০ টি বিদেশি বাণিজ্যিক জাহাজ আগমনের মধ্য দিয়ে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হওয়ার পাশাপাশি লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩০ টি এবং তিন দশমিক ৭৫ শতাংশ বেশি জাহাজ আগমন করেছে।
তিনি বলেন, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে কার্গো হ্যান্ডলিং লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৮৮ দশমিক ৮০ লক্ষ মেট্রিক টন। এ অর্থবছরে বন্দরে ১০৪ দশমিক ১২ লক্ষ মেট্টিক টন কার্গো হ্যান্ডলিংয়ের মধ্য দিয়ে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হওয়ার পাশাপাশি লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৫ দশমিক ৩২ লক্ষ মেট্টিক টন এবং ১৭ দশমিক ২৫ শতাংশ বেশি কার্গো হ্যান্ডলিং করা হয় এবং কন্টেইনার হ্যান্ডলিং লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২০ হাজার টিইইউজ। এ অর্থবছরে বন্দরে ২১ হাজার ৪৫৬ টিইইউজ কন্টেইনার হ্যান্ডলিংয়ের মধ্য দিয়ে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হওয়ার পাশাপাশি লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৪৫৬ টিইইউজ এবং সাত দশমিক ২৮ শতাংশ বেশি কন্টেইনার হ্যান্ডলিং করে।
প্রধান অর্থ কর্মকর্তা সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে রাজস্ব আয় লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩৩ হাজার ৩৮৭ লক্ষ টাকা। এ অর্থবছরে বন্দরে ৩৪ হাজার ৩৩৩ লক্ষ টাকা রাজস্ব আয়ের মধ্য দিয়ে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হওয়ার পাশাপাশি লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৯৪৬ লক্ষ টাকা এবং দুই দশমিক ৮৩ শতাংশ বেশি রাজস্ব আয় করেছে।
এছাড়াও বন্দরের নীট মুনাফার লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ২০ কোটি ৪৬ লক্ষ ২০ হাজার টাকা। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বন্দরে ৬২ কোটি ১০ লক্ষ টাকা নীট মুনাফা অর্জনের মধ্য দিয়ে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হওয়ার পাশাপাশি লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৪১ কোটি ৬৪ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা বেশি আয় করেছেন।
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের উপ পরিচালক মোঃ মাকরুজ্জামান বলেন, অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মোঃ ইউনুস দায়িত্বভার গ্রহণের পর বন্দরের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছেন। ইতিমধ্যে  সরকারের পক্ষ থেকে নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন এবং নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বিভিন্ন সময়ে  মোংলা বন্দর পরিদর্শন করে বন্দর উন্নয়ন ও মোংলা বন্দরের কার্যক্রম বৃদ্ধির জন্য নির্দেশনা প্রদান করেন। তাদের সময়োপযোগী পরামর্শে মোংলা বন্দরে কর্মচাঞ্চল্য বৃদ্ধির পাশাপাশি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বিশেষ ভূমিকা রেখেছ বলেও জানান তিনি।
  • শেয়ার করুন