২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শনিবার,সকাল ১০:০৯

শরণখোলায় বাজার থেকে ডেকে নিয়ে হরিণ শিকারী সাজানো মামলা

প্রকাশিত: এপ্রিল ১৯, ২০২৪

  • শেয়ার করুন

নিজস্ব প্রতিবেদক. বাগেরহাটের শরণখোলায় বাজার থেকে ডেকে নিয়ে এক যুবককে হরিণ শিকারের মামলায় আটকের অভিযোগ উঠেছে বন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। বুধবার (১৭ এপ্রিল) সন্ধ্যায় মোঃ জুয়েল নামের ওই যুবককে শরণখোলা বাজারের একটি চায়ের দোকান থেকে ডেকে নিয়ে যায় সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) মাহাবুব হোসেন। পরদিন বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) সকালে তাকে পূর্ব সুন্দরবনের বগি স্টেশনের চরখালি টহলফাঁড়ি সংলগ্ন অভয়ারণ্য থেকে হরিণ শিকারের জন্য ফাঁদ পেতেছে এমন অভিযোগে আটক দেখায় বন বিভাগ। এসময় তার কাছ থেকে ১৫০ ফুট হরিণ শিকারের ফাঁদও উদ্ধার করা হয়েছে বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে।

তবে স্থানীয় ও পরিবারের অভিযোগ, এসিএফের কাছে অতিরিক্ত রাজস্ব আদায়ের কারণ জানতে চাওয়ায় তাকে ধরে নিয়ে রাতভর মারধর ও নির্যাতন করা হয়। তবে বন বিভাগ বলছে প্রকৃত অপরাধী হওয়ায় ওই ব্যক্তিকে আটক করা হয়েছে। বন বিভাগের দাবী নিয়মিত টহল চলাকালে বগি স্টেশনের চরখালি টহলফারির নিকটবর্তী অভয়ারণ্য থেকে হরিণ ধরার ১৫০ ফুট ফাঁদ সহ জুয়েল নামে এক শিকারীকে আটক করা হয়। বৃহস্পতিবার ভোররাতে  সে আরো দুজন শিকারীকে সঙ্গে নিয়ে বনের অভ্যন্তরে ফাঁদ পেতেছিলেন। বনকর্মীরা তাদের আটক করার সময় দুজন পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। পালিয়ে যাওয়া দুজনের নাম পরিচয় এখনো জানা যায়নি। এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার মামলা দায়ের পূর্বক জুয়েলকে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।

আটক মোঃ জুয়েল ঢাকার ডেমরা থানার মোঃ জলাল এর ছেলে। তিনি ঈদের একদিন আগে বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলার খুড়িয়াখালী গ্রামে শশুর বাদশা হাওলাদারের বাড়িতে বেড়াতে এসেছিলেন।

জুয়েলের স্ত্রী সাথী বেগম বলেন, ঈদের আগের দিন আমি স্বামীকে নিয়ে ঢাকা থেকে গ্রামের বাড়ি বেড়াতে আসি। সে জঙ্গলে (সুন্দরবন) যেতে পরিচিতদের সাথে কথা বলছিলো। কিন্তু বনে প্রবেশের ফি অনেক বেশি হওয়ায় সে এসিএফকে কয়েকবার ফোন দেয়। এতে তিনি বিরক্ত হয়ে বাজার থেকে তাকে ধরে নিয়ে যায়। একদিন পরে হরিণ শিকারের মামলা দিয়ে জেলে পাঠিয়ে দিয়েছে।

সাথী বেগম আরও বলেন, আমার স্বামী বাজারে যাওয়ার সময় টি-শার্ট ও ট্রাউজার পরে ছিলো। কিন্তু তাকে আদালতে নেওয়ার সময় পুরাতন একটা লুঙ্গি পরিয়ে নিয়ে গেছে। আদালতে যখন দেখা হয়েছে দেখি মুখে মারের দাগ। শুনেছি অনেকে মেরেছে স্যাররা। আমি এই ঘটনার সুষ্ঠ বিচার চাই, যোগ করেন তিনি।

জুয়েলের শশুর বাদশা হাওলাদার বলেন, মেয়ে এবং জামাই ঢাকা থেকে ঈদের ছুটিতে বেড়াতে এসেছে। ফিরে যাওয়ার আগে সে সুন্দরবনে ঘুরতে যেতে চায়। কিন্তু রাজস্ব বেশি মনে হওয়ায় কি মনে করে যেনো এসিএফ স্যারকে ফোন দেয়। ফোনে একটু কথা কাটাকাটি হওয়ায় জামাইকে ধরে নিয়ে মিথ্যা মামলা দিয়ে জেলে দিয়ে দিছে।

ঘটনার প্রত্যাক্ষদর্শী রিয়াদুল ইসলাম বলেন, বুধবার বিকেলে আমরা কয়েকজন বাজারে একটি চায়ের দোকানে বসে আড্ডা দিচ্ছিলাম। এসময় এসিএফ স্যার দোকানের সামনে এসে তাকে ডেকে নিয়ে যায়। এরপর শুনি তাকে হরিণ শিকারের ফাদসহ আটক করা হয়েছে।

সাউথখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইমরান হোসেন রাজীব বলেন, জুয়েলের শশুর আমাকে জানায় তার জামাতাকে বন বিভাগের লোকজন ধরে নিয়ে গেছে। আমি রাতেই বিষয়টি বন বিভাগের অফিসে যাই। সহকারী বন সংরক্ষক আমাদের জানায়, তার সাথে মুঠোফোনে একাধিক বার অশোভন আচরণ করেছে সে। সব শুনে জুয়েলকে স্টেশনে দেখে আমরা চলে আসি।

তবে মিথ্যা মামলার অভিযোগ অস্বীকার করে শরণখোলা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) মাহাবুব হোসেন বলেন, চরখালী ক্যাম্পের বনরক্ষীরা এক শিকারীকে আটক করে আদালতে সোপর্দ করেছে। আমাকে তারা বিষয়টি জানিয়েছে। এর বেশি কিছু আমার জানা নেই। অপরাধী ছাড়া কাউকে আটক করা হয়না। এখন অপরাধীরা তো অনেক কিছুই বলতে পারে।

এ বিষয়ে সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা কাজী নুরুল করীম বলেন, আটকের বিষয়টি আমি শুনেছি। তবে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে বা মারধর করা হয়েছে এমন কোনো অভিযোগ আমার কাছে আসেনি।

  • শেয়ার করুন