প্রকাশিত: মে ৬, ২০২৪
নিজস্ব প্রতিবেদক. সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের জিউধারা স্টেশনের আমুরবুনিয়া টহল ফাঁড়ির এলাকায় লাগা আগুন তৃতীয় দিনের মত নিভানোর কাজ শুরু করেছে। সোমবার (৬ মে)সকাল থেকে আবারও কাজ শুরু করেছে বন বিভাগ, ফায়ার সার্ভিস, স্থানীয় বাসিন্দা ও সেচ্ছাসেবকরা। তাদের সহযোগীতায় যোগ দিয়েছে নৌ-বাহিনীর ৩টি দল। বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এস এম তারেক সুলতান এখবর নিশ্চিত করেছেন।
ইউএনও এস এম তারেক সুলতান বলেন, সোমবার সকালে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের পরিচালক অপারেশন লেফট্যানেন্ট কর্নেল তাজুল ইসলামের নেতৃত্বে তাদের ৫ টি টিম আগুন নিভানোর কাজ শুরু করেছে। এছাড়া নৌবাহিনর ৩টি টিম বন বিভাগ, শতাধিক স্বেচ্ছাসেবকরাও আগুন নেভানোর কাজে যোগ দিয়েছেন। তিনি আশা করেন আজ পুরোপুরি আগুন নিভাতে সক্ষম হবে। আগুন এখন অনেকটাই নিয়ন্ত্রিত অবস্থায় আছে বলেও জানান তিনি। এর আগে রোববার সন্ধ্যা ৬ টায় বনাঞ্চলের ঝুঁকি বিবেচনায় অগ্নিনির্বাপণ কাজ স্থগিত করা হয়।
গত শনিবারের লাগা আগুনে পুড়ে যাওয়া বনাঞ্চলের বেশ কিছু গাছপালা, লতাগুল্ম পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। ওই এলাকায় মূলত বলা, সুন্দরী, বাইন, গেওয়া, জিন, সিংড়াসহ বিভিন্ন ধরনের লতাগুল্ম জাতীয় গাছ রয়েছে। পুড়ে যাওয়া নিচের ভূমিতে এখন ছাইয়ের স্তর। তার ওপর দিয়ে তাপ উঠছে। সেখানে ধোঁয়ার আর তাপে শ্বাস নেয়া কষ্টকর। পুড়ে যাওয়া নিচের স্থারের কারণে এখন গাছের সবুজ পাতাও শুকিয়ে গেছে। নতুন করে ছাইয়ের ওপর পড়ছে এই শুকনো পাতা।ছিটিয়ে রয়েছে আগুনের পুড়ে যাওয়া গাছের ছাই।এর আগে সুন্দরবনে অন্তত ২৪ বারের অগ্নিকাণ্ডে ফায়ার সার্ভিস, বন বিভাগের পাশাপশি অন্য সংস্থাকে তেমন তৎপর থাকতে দেখা যায়নি। তবে এবার উপজেলা প্রশাসন থেকে শুরু করে বিভিন্ন বাহিনী ও অন্যান্য সংস্থাকে শুরু থেকে বেশ তৎপর এবং উদ্যোমী দেখা গেছে। ঘটনার পরপর বন বিভাগের পাশাপাশি ঘটনাস্থলে আসে উপজেলা প্রশাসন, ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ, জনপ্রতিনিধি। রোববার সকালে স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবীদের পাশাপাশি যোগ দেয় নৌবাহিনী এবং কোস্টগার্ড। দুপুরে যোগ দেয় বিমান বাহিনী।
এদিকে জিউধারায় বনজীবীদের পারমিট বন্ধ সুন্দরবন থেকে মাছ, মধুসহ যেকোনো সম্পদ আহরণে বন বিভাগ থেকে পাস-পারমিট (বনে প্রবেশের অনুমতি) নিতে হয় বনজীবীদের। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের চাদপাই রেঞ্জের জিউধারা স্টেশনের অন্তর্গত পুরো বনাঞ্চলে জেলে-বনজীবীদের এ পাস পারমিট বন্ধ করা হয়েছে। সুন্দরবন পূর্ব বনবিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) কাজী মুহাম্মদ নুরুল করিম এ তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন‘এখানকার যে পাস-পারমিট আছে,এটা সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে।
আমুরবুনিয়ায় মানববন্ধন সুন্দরবনের আগুন ‘মানবসৃষ্ট ও পরিকল্পিত উল্লেখ করে বনবিভাগ ও সরকারকে এ নিয়ে আরও ‘গুরুত্ব দেয়ার দাবি জানিয়ে রোববার সকালে আমোরবুনিয়া টহল ফাঁড়ির সামনে মানববন্ধন করেছে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা), সুন্দরবন রক্ষায় আমরা ও পশুর রিভার ওয়াটারকিপার।এ সময় বক্তারা বলেন, সুন্দরবন সংরক্ষিত বনাঞ্চল হলেও আমুরবুনিয়া টহল ফাঁড়ি অঞ্চলে চোরা শিকারীসহ মানুষের অবাধ যাতায়াত রয়েছে। গত ২৪ বছরে সুন্দরবনে ২৫ বার আগুন লেগে সরকারি হিসেবে প্রায় ১০০ একর বনভূমি ধ্বংস হয়েছে। মুনাফালোভী মাছ ব্যবসায়ী ও অসৎ বনকর্মর্তার যোগসাজশে এবং অদক্ষ মৌয়ালদের কারণে সুন্দরবনে বারে বারে আগুন লাগছে। এর দায়ভার বনবিভাগ কোনোভাবেই এড়াতে পারে না।পরিবেশকর্মী, সংবাদকর্মী, গবেষক ও বিশেষজ্ঞদের মতামত উপেক্ষা এবং অতীতে সংগঠিত তদন্ত কমিটির সুপারিশ বাস্তবায়ন না হওয়ায় সুন্দরবনে বার বার আগুন লাগছে। বাপা’র কেন্দ্রীয় যুগ্ম সম্পাদক মো নূর আলম শেখের সভাপতিত্বে মানববন্ধনে বক্তব্য দেন পশুর রিভার ওয়াটারকিপার ভলান্টিয়ার শেখ রাসেল, স্থানীয় বাপা নেতা ওমর ফারুক, লাকী বেগম, শহিদুল ফারাজী, মাসুদসহ আরও অনেকে।