প্রকাশিত: নভেম্বর ৪, ২০২৩
নিজস্ব প্রতিবেদক. বাগেরহাট: বাগেরহাটে শারীরিক প্রতিবন্ধীতা ও হাসি ঠাট্টাকে পিছনে ফেলে বিয়ে করলেন ৩৮ ইঞ্চি উচ্চতার খর্বাকৃত যুবক আব্বাস শেখ (২৫)।শুক্রবার (০৩ নভেম্বর) বিকেলে খুলনার ডাকবাংলা এলাকার সেলিম গাজীর মেয়ে (খর্বাকৃত) সোনিয়া খাতুন (২০)-এর সাথে তিনি বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। দুই পরিবারের সম্মতিতে ধর্মীয় নিয়ম-কানুন মেনে এক লক্ষ টাকা কাবিনে বর্নাঢ্য অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে এই বিয়ে সম্পন্ন হয়।
নববিবাহিত আব্বাস শেখ রামপাল উপজেলার শ্রিফলতলা গ্রামের আজমল শেখের ছেলে। তিনি রামপাল সরকারি কলেজে স্নাতক প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। তার নববিবাহিত স্ত্রী সোনিয়া খাতুন খুলনার একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ১০ শ্রেনির শিক্ষার্থী।তার উচ্চতা ৩৭ ইঞ্চি।
ছোটবেলা থেকেই খর্বাকৃত আব্বাসের উচ্চতা অনেক কম। যার কারণে প্রতিনিয়ত বন্ধু-বান্ধব, প্রতিবেশী, সহপাঠি এমনকি আত্মীয় স্বজনদের কাছে হাসিঠাট্টার পাত্র ছিলেন।মানুষের হাসি ঠাট্টা ও প্রতিবন্ধকতাকে পিছিয়ে ফেলে পড়াশুনা চালিয়ে গেছেন। স্নাতক পাশ করে স্নাতকোত্বর সম্পন্ন করার ইচ্ছে রয়েছে তার।স্ত্রীকেও উচ্চ শিক্ষিত করার চেষ্টা করবেন বলে জানিয়েছেন আব্বাস শেখ।
আব্বাস শেখ বলেন, শারীরিক প্রতিবন্ধী হওয়ায় অনেকেই আমাকে নিয়ে হাসি ঠাট্টা করত। কারো কথা নিয়ে মাথা ঘামাই নাই। বন্ধুরা বলত আমি কখনও বিয়ে করতে পারব না। আমাকে দিয়ে কিছুই হবে না। আল্লাহর রহমতে বিয়ে করেছি। শান্তিতে সংসারও করব।
সোনিয়াকে কিভাবে পেলেন এমন প্রশ্নে আব্বাস বলেন, বছর দেড়েকআগে পরিবারের পক্ষ পছন্দ করে রাখছিলো। চলতি বছরের (২০ অক্টোবর) আমার দুই বোন জামাইসহ আমি সোনিয়াকে দেখতে যাই এবং তাকে আমার পছন্দ হয়। আজ শুক্রবার আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে আমি আমার স্ত্রীকে বাড়িতে নিয়ে আসছি। পরিবারের পছন্দতে বিয়ে করেছি আপনারা আমাদের জন্য দোয়া করবেন। আমরা যেন সুন্দর ভাবে জীবন যাপন করতে পারি।
আব্বাসের মা নাজমা বেগম বলেন, ছোটবেলায় এক হাতে বই আর এক হাতে ছেলেকে নিয়ে স্কুলে গিয়েছি। অনেক কষ্টে মানুষের কথা শুনে ছেলেকে লেখাপড়া শিখিয়েছে। আমার দুই মেয়ে এবং একমাত্র ছেলে আব্বাস। অনেক কষ্টের ধন আমার, ওর জন্য আপনারা সবাই দোয়া করবেন।
রামপাল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি), এস. এম. আশরাফুল আলম বলেন, শারীরিকভাবে কিছুটা খাট হলেও, আব্বাস একটি সামাজিক ছেলে। বিভিন্ন সামাজিক আচার-আচারণে তাকে অংশগ্রহন করতে দেখেছি।বিয়েতে আমাকে দাওয়াত করেছিল।তার গায়ে হলুদে উপস্থিত ছিলাম। নবদম্পতিকে আমি শুভেচ্ছা জানাই। প্রতিবন্ধীদের নিয়ে হাসি ঠাট্টা না করে, তাদের প্রতিটি কাজে উৎসাহ দেওয়া প্রয়োজন। প্রতিবন্ধীরা এখন আর সমাজের বোঝা নয়, সঠিকভাবে লালন-পালন করতে পারলে, তারা সম্পদ হতে পারে। সকলকে প্রতিবন্ধী ও শারীরিকভাবে পিছিয়ে থাকা মানুষদের পাশে থাকার অনুরোধ জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।