২২শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার,সকাল ৭:৫৩

২২ বছরে সুন্দরবন পুড়েছে ২৫ বার, তদন্ত প্রতিবেদন অন্ধকারে!

প্রকাশিত: মে ৬, ২০২৪

  • শেয়ার করুন
আলী আকবর টুটুল: ম্যানগ্রোভ সুন্দরবনে ২২ বছরে ২৫ বার অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। শনিবার (৪ মে) দুপুরে বনে লাগা আগুন নিভাতে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সদস্যদের পশাপাশি বনবিভাগ ও স্থানীয়রা কাজ করে। তবে দুপুর ১২ টা নাগাদ যোগ দেয় বিমান বাহিনীর একটি হেলিকাপ্টার। উপর থেকে পানি ছিটিয়ে আগুন নিভাতে কাজ করে। কতটুকু বন পুড়েছে তা জানাতে পারেনি বন বিভাগ। তবে এর আগে ২৪ বারের অগ্নিকাণ্ডে প্রায় ১০০ একর বনজ সম্পদের (সুন্দরী গাছসহ বিভিন্ন লতা-গুল্ম) পুড়ে যায়।ম্যানগ্রোভ সুন্দরবনে ২২ বছরে ২৫ বার অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। শনিবার (৪ মে) দুপুরে বনে লাগা আগুন নিভাতে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সদস্যদের পশাপাশি বনবিভাগ ও স্থানীয়রা কাজ করে। আগুন লাগে সুন্দরবনে। গঠিত হয় তদন্ত কমিটি। তদন্ত রিপোর্টে আসে সুপারিশ, যার বাস্তবায়নে থেকে যায় ধোয়াশা।
সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. নুরুল করীম বলেন, ‘শনিবার দুপুরে প্রচণ্ড দাবদাহের মধ্যে সুন্দরবনের আমুরবুনিয়া এলাকার গহিনে হঠাৎ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। বনে আগুন নিয়ন্ত্রণে আগুন নেভানোর কাজে যোগ দিয়েছে নৌবাহিনী, বিমান বাহিনী, কোস্টগার্ড, পুলিশ, উপজেলা প্রশাসন, বন বিভাগ ও স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবকসহ ৫ শতাধিক সদস্যরা। এছাড়া সকাল থেকে ফায়ার সার্ভিস, বন বিভাগ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাজ করছে।
তিনি আরও বলেন, অগ্নিকাণ্ডের কারণ ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানতে চাঁদপাই রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক রানা দেবকে প্রধান করে ৩ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। অন্য সদস্যরা হলেন, সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের চাদপাই রেঞ্জের ধানসাগর স্টেশন কর্মকর্তা মো. রবিউল ইসলাম ও ঝিউধারা স্টেশন কর্মকর্তা ওবায়দুর রহমান। সদস্যের ওই কমিটিবে ৭ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। তদন্ত কমিটির রিপোর্টে যদি অগ্নিকাণ্ড মানবসৃষ্ট পাওয়া যায় তা হলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বন বিভাগের তথ্যমতে, ২০০২ সালে সুন্দরবনের পূর্ব বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের কটকায় একবার, একই রেঞ্জের নাংলী ও মান্দারবাড়িয়ায় দুবার, ২০০৫ সালে পচাকোড়ালিয়া, ঘুটাবাড়িয়ার সুতার খাল এলাকায় দুবার, ২০০৬ সালে তেরাবেকা, আমুরবুনিয়া, খুড়াবাড়িয়া, পচাকোড়ালিয়া ও ধানসাগর এলাকায় পাঁচবার, ২০০৭ সালে পচাকোড়ালিয়া, নাংলি ও ডুমুরিয়ায় তিনবার, ২০১০ সালে গুলিশাখালীতে একবার, ২০১১ সালে নাংলীতে দুবার, ২০১৪ সালে গুলিশাখালীতে একবার, ২০১৬ সালে নাংলী, পচাকোড়ালিয়া ও তুলাতলায় তিনবার, ২০১৭ সালে মাদ্রাসারছিলায় একবার, ২০২১ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি ধানসাগর এলাকায় এবং সবশেষ ২০২১ সালের ৩ মে সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের শরণখোলা রেঞ্জের দাসের ভারানি এলাকায় অগ্নিকান্ডে ঘটনা ঘটে। ২৪ বারের অগ্নিকাণ্ডে প্রায় ১০০ একর বনজ সম্পদের (সুন্দরী গাছসহ বিভিন্ন লতা-গুল্ম) পুড়ে যায়।
সন্দরবনে বারবার অগ্নিকাণ্ডে বিষয়ে সেভ দ্যা সুন্দরবন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ড. শেখ ফরিদুল ইসলাম বলেন, ‘সুন্দরবনের মধ্যে এমনি এমনি আগুন লাগতে পারে না। এর পেছনে অনেক কারণ আছে। হয়তো মাছ শিকারি, বিড়ি, সিগারেট, মধু সংগ্রহ করার জন্য আগুন লাগতে পারে ।তবে বিভিন্ন সময়ে আগুন লাগার ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির সুপারিশর বাস্তবায়ন জরুরি। যাতে সুন্দবনের আগুনে ক্ষয়ক্ষতি কমবে।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স খুলনা বিভাগের উপপরিচালক মামুন মাহমুদ বলেন, সুন্দরবনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা শোনার পর বন বিভাগ ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয়রা সেখানে ছুটে  সকাল থেকে ফায়ার সার্ভিসের ৫ টি ইউনিটে প্রস্তুত রয়েছে। ৩টি ইউনিট আগুন নেভানোর কাজ শুরু করছে। নৌবাহিনী, বন বিভাগ, পুলিশ স্থানীয় প্রাশন সকলে আগুন  নির্বাপনের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। আগুন লাগার জায়গাটিতে শুকনো পাতার অনেক পুরু স্তূপ রয়েছে। ছোট গাছ, লতাপাতাসহ পুড়েছে এখন পয়ন্ত যা দেখা গেছে।
এর আগে ২৪ দফা অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা খতিয়ে দেখতে বিভিন্ন সময়ে বন বিভাগের গঠিত তদন্ত দল নাশকতা, অসচেতনতা, অবহেলায় ফেলে দেওয়া বিড়ি বা সিগারেটের আগুনকে দায়ী করেছে।তদন্ত কমিটিগুলো নানা সুপারিশ করেছে বনকে সুরক্ষা দিতে। এর মধ্যে অন্যতম বন ব্যবহারকারীদের সচেতনতা বৃদ্ধি, বন-সংলগ্ন মরে যাওয়া নদ-নদী খনন এবং সীমান্ত এলাকায় বেড়া ও ওয়াচ টাওয়ার নির্মাণ। তবে তদন্ত কমিটির সুপারিশ বাস্তবায়ন সব সময়ই উপেক্ষিত থেকে গেছে। 

  • শেয়ার করুন