২১শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, বৃহস্পতিবার,বিকাল ৫:২২

সুপার সাইক্লোন সিডরের ১৭ বছর: নির্মান হয়নি টেকসই বেরিবাঁধ ঝুকিতে এলাকাবাসি

প্রকাশিত: নভেম্বর ১৫, ২০২৪

  • শেয়ার করুন

আলী আকবর টুটুল. আজ সুপার সাইক্লোন সিডরের ১৭ বছর : নদী শাসন না করেই নির্মাণ করা হয় টেকসই বেড়িবাধ। হস্তান্তরের এক বছর যেতে না যেতেই বাঁধের ব্লক ধ্বস, নদী ভাঙ্গন শুরু। অপরিকল্পিত বাধঁ নির্মানে ঝুকিঁতে রয়েছে ৭ কিলোমিটার বেরিবাঁধ এলাকার মানুষ। বাঁধ রক্ষায় শীঘ্রই নদী শাসন করার দাবী স্থানীয়দের।

২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর সুপার সাইক্লোন সিডরের আঘাতে লন্ডভন্ড হয়ে যায় বাগেরহাটসহ উপকূলীয় কয়েকটি জেলা। সরকারি হিসেবে এই দিনে প্রায় ৯‘শ ৮ জন মানুষের মৃত্যু হয়েছিল সিডরের আঘাতে। আর্থিক ক্ষতি হয়েছিল কয়েকশ কোটি টাকার। স্বজন হারানো বেদনা ও আর্থিক ক্ষতি ভুলে শরণখোলা-মোরেলগঞ্জবাসীর একমাত্র দাবি ছিল টেকসই বেরিবাঁধ। গণ মানুষের দাবির প্রেক্ষিতে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে সরকার ২০১৫ সালে ২৪২ কোটি টাকা ব্যয়ে উপকূলীয় বাঁধ উন্নয়ন প্রকল্প (সিইআইপি) নামে একটি প্রকল্পের অধীনে মোরেলগঞ্জ থেকে শরণখোলা উপজেলার বগী-গাবতলা পর্যন্ত ৬৩ কিলোমিটার টেকসই বাঁধ নির্মান শুরু হয়। যারমধ্যে ১২ কিলোমিটার কক্রিটের ব্লক বাঁধ । এই ১২ কিলোমিটার ভাধের মধ্যে ৭ কিলোমিটার ভাঙ্গণে রয়েছে।

গত ২০২৩ সালের ডিসেম্বর মাসে  নির্মান কাজ শেষ করে বাগেরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাছে বাধ হস্তান্তর করা হয়। তবে বাঁধ হস্তান্তরের আগেই ব্লক ধ্বসে বিলীন হওয়া শুরু করে বলেশ্বর নদীতে।এলাকাবাসির মাঝে দেখা দেয়  বাধ ভাঙন আতংক ও জমি ঘর হারানোর ভয়। তাদের অভিযোগ বাধ নির্মাণের সময় মাটির বদলে বালু দেওয়ায় বলেশ্বর নদীতে ব্লক ধ্বস ও মাটির উপরের অংশে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে।

স্থানীয় তাফালবাড়ি কলেজিয়েট স্কুলের শিক্ষক নজরুল ইসলাম আকন বলেন,শরণখোলা উপজেলার বগী, গাবতলা, মোরেলগঞ্জের আমতলা, ঘাষিয়াখালী এলাকা থেকে ভাঙ্গন শুরু হয়েছে। বাঁধের ব্লক ধ্বসে বিলীন হচ্ছে নদীতে। এছাড়াও বেশকয়েকটি স্থান ঝুকিপূর্ণ রয়েছে। এমন অবস্থা হওয়ায় চিন্তিত এলাকাবাসী। নদী শাসন না করে বাধ নির্মানে এধরনে ক্ষতি শিকার হচ্ছে।

দক্ষিন সাউথখালী গ্রামের শহিদুল ইসলাম বলেন, বলেশ্বর নদীর ভাঙ্গনে আমার ও পরিবারের প্রায় ১৫০ বিঘা জমি হারিয়েছি। সিডরে স্বজন হারিয়েছি। বাঁধ নির্মান শুরু হলে আশায় বুক বেঁধেছিলাম। ভাঙ্গন ও দূর্যোগ থেকে মুক্তি পাব। সেই স্বপ্ন এখন দুঃস্বপ্নে রুপ নিয়েছে। টেকসই বেরিবাঁধেই ভাঙ্গন শুরু হয়েছে। বাধের উপরের মাটির অংশে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এখন মনে হচ্ছে বিপুল টাকার এই বাঁধ আমাদের কোন কাজে আসবে না।

গাবতলা এলাকার আব্দুর রশীদ বলেন, বাঁধ নির্মানের শুরুতেই আমরা নদী শাসনের দাবি করেছিলাম। এজন্য সভা, সমাবেশ, মানববন্ধনসহ নানা কর্মসূচি পালন করেছিলাম। তারপরও নদী শাসন না করে বাঁধ নির্মান করেছে সিইআইপি প্রকল্প। এখন বাঁধে ভাঙ্গন শুরু হয়েছে, ফসলি জমি, গাছপালা, বসত ঘর ঝুকির মধ্যে রয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড বাগেরহাটের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু রায়হান মোহাম্মাদ আল বেরুনী বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের ৩৫/১ পোল্ডারের ৬৩ কিলোমিটার বেরিবাঁধ নির্মান করে সিআইপি। এর পর গত বছরের ডিসেম্বর মাসে আমাদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। তবে বলেশ্বর নদীর স্রোত তীব্র হওয়ায় বিভিন্ন স্থানে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। আমরা মাঠে থেকে পর্যবেক্ষন করে কাজ করছি। তবে প্রায় ৭ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে নদী শাসন জরুরী হয়ে পড়েছে বলে জানান এই প্রকৌশলী।নদীর গভীরতা ও স্রোত বেশি থাকায় ভাঙ্গন সৃষ্টি হওয়ায় নদী শাসনের একটি প্রকল্প প্রস্তাব উর্দ্ধোন কর্তৃপক্ষের নিকট পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন হলে ভাঙ্গনের সমস্যার সমাধান হবে বলে আশা করেন তিনি।

  • শেয়ার করুন