২০শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শুক্রবার,সকাল ৮:৪৩

বাগেরহাটের সিকদার বাড়ি পুজামন্ডপে দেশ-বিদেশের দশর্নার্থীদের উপচে পড়া ভীড়

প্রকাশিত: অক্টোবর ২১, ২০২৩

  • শেয়ার করুন

এসএস সোহান, বাগেরহাট:  বাগেরহাটে শারদীয় দূর্গাপুজায় দেশি বিদেশি ভক্ত, দর্শনার্থী ও সনাতন ধর্মালম্বীদের পদচারণায় মুখরিত হাকিমপুরের শিকদার বাড়ি পূজামণ্ডপ। শনিবার (২১ অক্টোবর) সকাল থেকে মন্দিরে ভীড় শুরু হয়। দুপুরের পর থেকে ক্রমেই বাড়তে থাকে ভক্ত দর্শনার্থীদের ভীড়। ভীড় সামলাতে রীতিমত হিমশিম খেতে হয়েছে কর্তব্যরত আয়োজক, র‌্যাব,পুলিশ ও আনসার সদস্যদের।

বিকেলে সরোজমিনে গিয়ে দেখা যায়, হাকিমপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সামনের সড়ক থেকে মূল মন্দির পর্যন্ত প্রায় ৫০০ মিটার সড়কসহ আশপাশ এলাকা জুড়ে উপচে দর্শনার্থীদের ভীড়। মন্দিরের যত কাছে যাওয়া যায় ভীড় তত বাড়তে থাকে। আয়োজকদের নির্ধারিত ফটক দিয়ে প্রবেশ করে পাঁচ শতাধিক প্রতিমা দেখে বের হয়ে যাচ্ছেন দর্শনার্থীরা। কেউ কেউ আবার মা দূর্গাসহ অন্যান্য প্রতিমার সাথে সেলফি তোলায় ব্যস্ত। পরিবার পরিজন নিয়ে শিকদার বাড়ি মন্দিরে সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে পেরে খুশি ভক্ত ও দর্শনার্থীরা।

খুলনার ডুমুরিয়া থেকে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে ঘুরতে আসা ননী গোপাল দাস বলেন, গতকাল পূজা শুরুর পর থেকে অনেক মন্দিরে ঘুরেছি। এতবেশি প্রতিমা কোথাও দেখিনি। অনেক ভাল লেগেছে। দুই ছেলে ও স্ত্রী দীপা খুব খুশি হয়েছে।

মৌসুমি দেবনাথ নামের এক দর্শনার্থী বলেন, দূর্গাপূজা মানেই শিকদার বাড়ি পূজামন্ডপ। শিকদার বাড়ি পূজা মন্ডপে না আসলে মনে হয় অপূর্নতা রয়ে গেছে।

ভারত থেকে শিকদার বাড়ি মন্দিরে আসা প্রেসক্লাব অব ইন্ডিয়ার সভাপতি গৌতম লাহিড়ী বলেন, ইন্ডিয়া থেকে যখন বাংলাদেশে এসেছি, তখন পরিচিত অনেকেই বলেছেন শিকদার বাড়ির পূজা দেখে আসিয়েন। ভারতের চেয়ে বৈচিত্রের দিক থেকে শিকদার বাড়ির এই আয়োজন ব্যতিক্রম। এখানের আয়োজন শুধু ধর্মীয় অনুষ্ঠানের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই, এটা একটি মিলন মেলায় পরিনত হয়েছে। ব্যতিক্র্রম এই পূজার জন্য আয়োজকদের ধন্যবাদ জানান এই সাংবাদিক নেতা।

এদিকে শিকদার বাড়ির এই আয়োজনকে ঘীরে স্থানীয়দের মাঝেও ব্যাপক উৎসাহ উদ্দিপনা লক্ষ করা গেছে। মন্দিরের আশপাশে সড়কের দুই পাশে বিভিন্ন পন্যের পশরা সাজিয়ে বসেছে অর্ধশতাধিক দোকানি। ভক্ত-দর্শনার্থীরাও নিজের পছন্দ অনুযায়ী খাবার, খেলনা ও প্রয়োজনীয় পন্য ক্রয় করতে পারছেন।

অন্যদিকে পূজা মন্ডপ ও ভক্ত দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে জেলা পুলিশ, আনসার ও র‌্যাব সদস্যরা কাজ করছে। এর পাশাপাশি সাদা পোশাকেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছেন। রয়েছে আয়োজকদের নিজস্ব স্বেচ্ছাসেবক দল।

শিকদার বাড়ি দূর্গাপূজার আয়োজক ব্যবসায়ী লিটন শিকদার বলেন, আমার স্বর্গীয় বাবা দুলাল শিকদার ২০১০ সালে ১৫১টি প্রতিমা নিয়ে প্রথম বারের মত ব্যতিক্রমী দুর্গা পূজার আয়োজন করেন। এরপর থেকে প্রতিবছরই আমরা প্রতিমার সংখ্যা বৃদ্ধি করতে থাকি। এক পর্যায়ে ২০১৯ সালে ৮০১টি প্রতিমা নিয়ে আমরা দূর্গা পূজার আয়োজন করি। আমাদের এই পূজায় সারা বাংলাদেশ থেকে ভক্ত দর্শনার্থীরা এসে থাকেন। দেশের বাইরে থেকেও অনেক ভক্তরা আসেন। তবে করোনার কারণে আমরা গেল তিন বছর সীমিত পরিসরে পূজার আয়োজন করেছিলাম। এবছর সাড়ম্বরে আমরা দূর্গাপূজার আয়োজন করেছি। এবার ৫০১টি প্রতিমার মাধ্যমে আমরা সনাতন ধর্মীয় বিভিন্ন পৌরানিক কাহিনী তুলে ধরেছি। দর্শনার্থীরাও অনেক খুশি হয়েছে, আমাদের ঘুরে দেখে।

এবছর বাগেরহাটের ৯টি উপজেলা ও ৩টি পৌরসভায় ৬৪২টি পূজা মন্ডপে দূর্গা পূজা অণুষ্ঠিত হচ্ছে। শুক্রবার ৬ষ্ঠি পূজার মধ্য দিয়ে সনাতন ধর্মালম্বীদের এই মহোৎসবের মূল আয়োজন শুরু হয়। নানা আচার অনুষ্ঠান ও পূজার পরে মঙ্গলবার দশমী পূজা ও দেবি বিসর্জনের মধ্য দিয়ে এই আয়োজনের শেষ হবে।

 

  • শেয়ার করুন