৩রা ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, মঙ্গলবার,রাত ১১:০২

একুশে পদকে ভূষিত হলেন  বাগেরহাটের কবি রুদ্র মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ 

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০২৪

  • শেয়ার করুন

নিজস্ব প্রতিবেদক.বাগেরহাট : ভাষা ও সাহিত্যে বিশেষ অবদানের জন্য মৃত্যুর ৩২ বছর পরে একুশে পদকে ভূষিত হলেন দ্রোহের কবি রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহ।মঙ্গলবার (১৩ ফেব্রুয়ারি)সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপসচিব আইরীন ফারজানা স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে পদকপ্রাপ্ত অন্যান্যদের সাথে রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহ‘র নাম প্রকাশ করা হয়। মৃত্যুর ৩২ বছর পরে পদক পাওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন তার পরিবার ও শুভাকাঙ্খিরা।

কবির ভাই ও রুদ্র স্মৃতি সংসদের সভাপতি সুমেল সারাফাত বলেন, রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহ‘র কবিতা বাংলা ভাষা ও বাঙ্গালীদের সম্মৃদ্ধ করেছে। মৃত্যুর দীর্ঘদিন পরে হলেও, সরকার ও সংস্কৃত মন্ত্রণালয় কবিকে সম্মানিত করেছেন এজন্য আমরা কৃতজ্ঞ। মোংলাবাসীও সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়েছে। রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহ‘র মরণোত্তর একুশে পদক পাওয়া উপলক্ষে রুদ্র স্মৃতি সংসদের পক্ষ থেকে নানা কর্মসূচি পালন করা হবে বলে জানান তিনি।

পরিবার সূত্রে জানাযায়, কবি রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহ ১৯৫৬ সালের ১৬ অক্টোবর বরিশালের রেডক্রস হাসপাতালে জন্মগ্রহন করেন। পরবর্তীতে বাবার চাকুরীর সূত্রে বাগেরহাটের মোংলায় বসবাস শুরু করেন কবির পরিবার। পরে উপজেলার মিঠাখালী এলাকায় স্থায়ী ভাবে থাকেন তারা। কবির মা শিরিয়া বেগম, বাবা শেখ ওয়ালীউল্লাহ ছিলেন চিকিৎসক।কবি রুদ্র মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ‘র ৬ ভাই ও চার বোনের মধ্যে ৩ ভাই মারা গেছেন। কবির ভাই ও স্বজনরা এখন মোংলাতেই থাকেন।  রুদ্র ঢাকা ওয়েস্ট অ্যান্ড হাই স্কুল থেকে এসএসসি, ঢাকা কলেজ থেকে এইচএসসি এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৮০ সালে বিএ অনার্স (বাংলা) ও ১৯৮৩ সালে এমএ পাস করেন।ছাত্রজীবনেই তার দুটি কাব্যগ্রন্থ ‘উপদ্রুত উপকূল’ (১৯৭৯) ও ‘ফিরে চাই স্বর্ণগ্রাম’ (১৯৮১) প্রকাশিত হয়। এ দুটি কাব্য তাকে কবি খ্যাতি এনে দেয়। মাত্র ৩৫ বছরের (১৯৫৬-১৯৯১) স্বল্পায়ু জীবনে তিনি সাতটি কাব্যগ্রন্থ ছাড়াও গল্প, কাব্যনাট্য এবং ‘ভালো আছি ভালো থেকো’ সহ অর্ধ শতাধিক গান রচনা ও সুরারোপ করেছেন। পরবর্তীকালে এ গানটির জন্য তিনি বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতি প্রদত্ত ১৯৯৭ সালের শ্রেষ্ঠ গীতিকারের (মরণোত্তর) সম্মাননা লাভ করেন।‘উপদ্রুত উপকূল’ ও ‘ফিরে চাই স্বর্নগ্রাম’ কাব্যগ্রন্থ দুটির  জন্য ‘সংস্কৃতি সংসদ’ থেকে পরপর দু’বছর ‘মুনীর চৌধুরী সাহিত্য পুরষ্কার লাভ করেন। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট ও জাতীয় কবিতা পরিষদ গঠনে তিনি গুরুত্বপূর্ন ভুমিকা পালন করেন।’উপদ্রুত উপকূল’ ও ‘ফিরে চাই স্বর্ণগ্রাম’ কাব্যগ্রন্থ দুটির জন্য ‘সংস্কৃতি সংসদ’ থেকে পরপর দুবছর ‘মুনীর চৌধুরী সাহিত্য পুরস্কার লাভ করেন। এছাড়া সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট ও জাতীয় কবিতা পরিষদ গঠনে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।অকাল প্রয়াত এই কবি তার কাব্যযাত্রায় যুগপৎ ধারণ করেছেন দ্রোহ ও প্রেম, স্বপ্ন ও সংগ্রামের শিল্পভাষ্য। ‘জাতির পতাকা আজ খামচে ধরেছে সেই পুরোনো শকুন’ এই নির্মম সত্য অবলোকনের পাশাপাশি ততোধিক স্পর্ধায় তিনি উচ্চারণ করেছেন ‘ভুল মানুষের কাছে নতজানু নই’।

যাবতীয় অসাম্য, শোষণ ও ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে অনমনীয় অবস্থান তাঁকে পরিণত করেছে ‘তারুণ্যের দীপ্ত প্রতীক’-এ। একই সঙ্গে তাঁর কাব্যের আরেক প্রান্তর জুড়ে রয়েছে স্বপ্ন, প্রেম ও সুন্দরের মগ্নতা। দেশ ও জাতির সংকটে রুদ্রের কবিতা হয়ে উঠেছে তারুণ্যের হাতিয়ার। ক্ষনা জন্মা এই কবি ১৯৯১ সালের ২১ জুন মাত্র ৩৫ বছর বয়সে তিনি মারা যান।বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০২৪ সালে  দেশের ২১ জন বিশিষ্ট নাগরিক একুশে পদক পাচ্ছেন। এর মধ্যে ভাষা ও সাহিত্যে একুশে পদক পেয়েছেন রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহ (মরণোত্তর)সহ ৪ জন।

  • শেয়ার করুন