প্রকাশিত: অক্টোবর ৫, ২০২৪
নিজস্ব প্রতিবেদক. বেশ কয়েক বছর ধরে বাগেরহাট সদর উপজেলার হাকিমপুর গ্রামের শিকদার বাড়িতে জমকালো আয়োজনের মধ্যে দিয়ে পালিত হয়ে আসছিল সনাতন ধর্মালম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব দূর্গা পূজা। তবে এবার আর সেই জাকজমপুর্ন ভাবে দুর্গোৎসব পালন হচ্ছে না। প্রতি বছরই দেশ জুড়ে সনাতন ধর্মালম্বীদের চোখ থাকে শিকদার বাড়ির পূজা মন্ডপের দিকে। সরেজমিনে গিয়ে যা জানা গেলে এবার সিকদার বাড়িতে দূর্গা পুজার খবর ।
বৃহস্পতিবার (৩ অক্টোবর) বিকেলে সাড়ে চারটা।বাগেরহাট সদর উপজেলার হাকিমপুর গ্রামের আলোচিত সিকদার বাড়িতে শুনশান নীরবতা। বাড়ির সামনের পুজা মন্ডপের গেটটি তালাবদ্ধ। আশেপাশের সবকিছুই যেন স্তব্ধ। এমনই চিত্র চোখে পড়ে উপমহাদেশের সবচেয়ে বেশি প্রতিমা নিয়ে আয়োজন করা দুর্গোৎসবের সেই পূজা মন্ডপটি।
প্রায় ২০ মিনিট অবস্থান করার পর কাউকে না পেয়ে ঢুকে গেলাম আয়োজক লিটন সিকদারের বাসভবনে। সেখানে দেখা মিলল বাড়ির কয়েকজন নারীর সাথে। তবে দুবর্গোৎস এর ব্যাপারে তারা কোন কথা বলতে রাজি হননি।ফিরে আসার সময় রাস্তায় মন্দিরের সামনে দেখা মিলল আয়োজক লিটন শিকদারের ঘনিষ্ঠ গৌরব শিকদারের সাথে।
এবারের পূজা উদযাপনের বিষয়ে তার কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, দেশ ও দেশের বাইরে আলোচনা ছিল শিকদার বাড়ির সবচাইতে বড় এই পূজা মন্ডপটি। প্রতিবছরই প্রায় ছয় মাস ধরে ১৫ থেকে ২০ জন কারিগরের হাতে চলে দেবদেবীর প্রতিমা তৈরীর কাজ। এবারের পুজোর জন্যও শিকদার বাড়িতে বেশ কয়েকজন কারিগর প্রতিমা তৈরীর কাজ শুরু করেছিলেন। তবে তৈরিও করা হয়েছিল কিছু প্রতিমা। কিন্তু প্রধান ভাস্কর অসুস্থ হয়ে যাওয়ায় কাজ স্থগিত করা হয় প্রতিমা তৈরীর কাজ। এরপর তাকে ভারতে চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়। তবে এবার আর ধুমধাম সেই আয়োজন আর থাকছে না। ধারণা করা হচ্ছে পারিবারিকভাবে পুজোর ছোটখাটো আয়োজন করা হবে।
হাকিপুর গ্রামের বাসিন্দা নিরঞ্জন সাহা নামের এক ব্যক্তি বলেন, কয়েক বছর ধরে শিকদার বাড়িতে দেশের সবচেয়ে বড় দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। একারনে শিকদার বাড়ি দেশজুড়ে আলোচিত নাম। এলাকার বাইরেরও ধর্মবর্ণ নির্বিশেষে সবাই পূজার সময় এক হয়ে কাজ করে। কিন্তু এ বছর তেমন সাড়া নেই। শিকদার বাড়িরর লোকজন ছাড়া কেন বড় পরিসরে পূজা হবে না বলা সম্ভব না।
প্রতিবেশি লক্ষী সাহা বলেন, শিকদারবাড়ির পূজা দেখতে দেশ বিদেশের হাজার হাজার মানুষের সমাগম ঘটে এই গ্রামে। তবে এবার কোন আয়োজনই চোখে পড়ছে না।
সিকদার বাড়ি দুর্গোৎসবের আয়োজক বিশিষ্ট ব্যবসায়ী লিটন সিকদার মুঠোফোনে এ প্রতিবেদককে বলেন, ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানে অনেকের প্রাণহানি ঘটেছে। একদিকে শোক চলছে অন্যদিকে আনন্দ হবে আমি এটা মেনে নিতে পারিনি।এজন্যই এবার পুজোর বড় আয়োজন রাখা হয়নি। তবে পারিবারিকভাবে ছোট পরিসরে পুজা করা হবে বলে জানান তিনি।
উল্লেখ্য সর্বপ্রথম ২০১১ সালে ২৫১টি প্রতিমা নিয়ে প্রথম দুর্গাপূজার জমকালো আয়োজন শুরু হয়। সেই থেকে প্রতিবছর বড় মহাধুমধামে পূজা হয়ে আসছে এই বাড়িতে। ২০১৯ সালেও ৮০১টি প্রতিমা নিয়ে এই বাড়িতে পূজা উদযাপিত হয়েছে। কিন্তু করোনার কারণে ২০২০ সালে শিকদার বাড়িতে খুবই সীমিত পরিসরে পূজা উদযাপিত হয়েছে। বিভিন্ন দেশ-বিদেশের দর্শনার্থীদের সমাগম ঘটেছে সিকদার বাড়িতে।