২৭শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, শনিবার,দুপুর ১:০০

সুন্দরবন পর্যটন খাতের রাজস্ব আদায়ের দায়িত্ব পেল ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ৩, ২০২৪

  • শেয়ার করুন

মাহমুদ হাসান:  বাগেরহাট কর্তৃপক্ষের ৩৩ শর্তে সুন্দরবনের পর্যটন স্পট ও বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রের রাজস্ব আদায়ের কার্যক্রম বেসরকারি খাতে ছেড়ে দিয়েছে বন বিভাগ। বন বিভাগ জানিয়েছে, ১ জানুয়ারি থেকে শুরু করে ২০২৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত এক বছরে ৩০ লাখ টাকার চুক্তিতে দেশ-বিদেশি পর্যটক আগমনের প্রবেশ ফি ও রাজস্ব আদায় করবে একটি ব্যক্তি মালিকানা প্রতিষ্ঠান। তবে ট্যুর ব্যবসায়ী ও সংশ্লিষ্টরা বলছে, বন বিভাগের এ পদক্ষেপে রাজস্ব আদায় বাড়লেও পর্যটকদের সঙ্গে ইজারাদারের আচরণ ভবিষ্যতে দর্শনার্থী আগমন কমে আসার আশঙ্কা রয়েছে।
বন বিভাগ সূত্রে জানায়, পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবন, প্রকৃতির অপরূপ সেই নৈসর্গিক সৌন্দর্য উপভোগের জন্য পর্যটক আগমন মৌসুমে সুন্দরবনের করমজল, হারবাড়িয়া, আন্দারমানিক, দুবলা, কটকা, কচিখালী, নীলকমলসহ সমুদ্র তীরবর্তী বনাঞ্চলের ৭টি পর্যটক স্পটে দূর-দূরান্ত থেকে আসা দর্শনার্থীদের উপস্থিতিতে এক ধরনের মিলন মেলায় পরিণত হয়। আর দেশ-বিদেশি পর্যটকদের বনের দৃষ্টিনন্দন স্থাপনা ও বন্যপ্রাণী দেখতে একটি নির্দিষ্ট রাজস্ব দিয়ে দর্শনার্থীদের প্রবেশ করতে হয় সুন্দরবনে। শুরু থেকেই এর বনের প্রবেশ ফি ও অন্যান্য রাজস্ব আদায় করে আসছিল প্রতিটি স্পটের বনরক্ষীরা।

কিন্তু বন বিভাগের এক সিদ্ধান্তে গত বছরের ১৮ অক্টোবর বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ৭টি স্পটের মধ্যে করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রের পর্যটকদের প্রবেশ ফি ও সার্ভিস চার্জ আদায়ের জন্য ১১ নভেম্বর সর্বোচ্চ দরদাতা হওয়ায় ব্যক্তি মালিকানা ‘মেসার্স ইমন মেডিকেল হল এন্ড ঠিকাদার’ নামে এক প্রতিষ্ঠানকে ইজারাদার প্রদান করেন। তারা ভ্যাট ও আইটি বাদে ৩০ লাখ টাকা নির্ধারণ করে। এছাড়া বনের বন্যপ্রাণী ও মৎস্য প্রজনন মৌসুমে ৩ মাস বন্ধ রাখা, বন্যপ্রাণীদের কোনো খাবার না দেয়া, শব্দ দূষণ না করা, বনের মধ্যে প্লাস্টিক বর্জ্য না ফেলা, নির্ধারিত প্রবেশ ফি দেশি পর্যটক-৪৬ ও বিদেশি পর্যটক ৫৭৫ টাকা, ভিডিও ক্যামেরা দেশি-৩৪৫, বিদেশি-৫৭৫ টাকাসহ আনুষঙ্গিক ৩৩টি শর্তে বেধে দিয়ে এক বছরের জন্য ইজারা প্রদান করা হয়। যা ১ জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়সীমা বেধে দেয় বন বিভাগ।

এরইপ্রেক্ষিতে ১ জানুয়ারি থেকে সুন্দরবনের করমজল ও বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রের রাজস্ব আদায় শুরু করে ইজারাদার ‘মেসার্স ইমন মেডিকেল হল এন্ড ঠিকাদার’ প্রতিষ্ঠান। কিন্তু বছরের শুরু থেকেই পর্যটক কমতে শুরু করে সুন্দরবনের করমজলে। তবে রাজস্ব খাতটি ছেড়ে দেয়ায় ব্যক্তি মালিকানায় সরকারি রাজস্ব বৃদ্ধি হলেও পর্যটক আগমন হ্রাস ও এর সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা চরম ক্ষতির মুখে পড়বে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্ট অনেকেই।

মালিক পক্ষের প্রতিনিধি জি এম রফিকুল হাসান বলেন, ‘আমাদের প্রতিষ্ঠান ৩০ লাখ টাকায় ইজারা নিয়েছে। এর সঙ্গে ভ্যাট ও আইটি রয়েছে, তাতে প্রায় আরও ৫ লাখ টাকা প্রয়োজন হবে। এছাড়া এখানে ১২ জন কর্মচারী কাজ করছে, তাদের প্রতি মাসে ১৫ হাজার টাকা করে বেতন এবং অন্যান্য খরচ বাবদ আরও ২ লাখ টাকা যাবে। এর মধ্যে চলতি মৌসুমে পর্যটকের সংখ্যা কম। তারপরও আমাদের লক্ষ্যমাত্রা পরিপূর্ণ করার জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছি। তবে আমরা এবং বন বিভাগ মিলে মিশে কাজ করতে পারলে একটি ভাল সুফল আসবে।’

খুলনা জোনের ট্যুরিস্ট পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার দেবব্রত সরকার বলেন, ‘পর্যটকদের আগমন বাড়াতে এবং তাদের নিরাপত্তায় কাজ করছে ট্যুরিস্ট পুলিশের পৃথক টিম। এছাড়া সুন্দরবন রক্ষা ও পর্যটক আগমন নির্বিঘ্ন করতে সব সময় কাজ করছি আমরা।’

তিনি আরও বলেন, ‘পূর্ব সুন্দরবনের চাদপাই রেঞ্জের করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রের পর্যটক বৃদ্ধি পাওয়া বা কমে আসা এটি নির্ধারণ করবে ইজারাদারদের আচরণের ওপর। কারণ দূরদূরান্ত থেকে দর্শনার্থী টাকা খরচ করে আসবে সুন্দরবন দেখতে। তারা যদি একটু ভাল আচার-ব্যবহার আমাদের কাছে না পায় তবে দ্বিতীয়বার আর আসবে না।’

২০২৩ সালে রাজনৈতিক অস্থিরতায় পর্যটক কম হওয়ার পরেও করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্র ও পর্যটন স্পট থেকে প্রায় ২৪ লাখ ১১ হাজার ৫৭৩ টাকা রাজস্ব আয় করেছিল বন বিভাগ।

  • শেয়ার করুন